ম্যাক্রোঁর দলের বিদ্রোহের মুখে অভিবাসন বিল পাস

ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁর সমর্থনে দেশটির পার্লামেন্টে বহুল আলোচিত অভিবাসন বিল পাস হয়েছে। এসময় তার নিজ দলের বিদ্রোহীদের মুখে পড়েন ম্যাক্রোঁ। ফ্রান্সের পার্লামেন্টে গতকাল মঙ্গলবার ফ্রান্স পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষে সংখ্যাগরিষ্ঠ সমর্থন নিয়ে বিলটি পাস করা হয়। 

এসময় বিলটি পাসে মারি লো পেনের কট্টর ডানপন্থী দল ন্যাশনাল র‍্যালির (আরএন) সমর্থন ক্ষমতাসীনদের প্রয়োজন হয়নি। ৩৪৯ জন সদস্য বিলটির পক্ষে এবং ১৮৬ জন বিপক্ষে ভোট দেন। এদিকে উচ্চকক্ষে ইতিমধ্যে আইনটি পাস করা হয়েছে। 

৪১ বছর বয়সী উচ্চাভিলাষী রাজনীতিবিদ হিসাবে পরিচিত ফ্রান্সের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জেরাল্ড ডারমানিন আইনটির নেতৃত্ব দিয়েছেন। পড়ে আইনটি পাসের পর স্বস্তি প্রকাশ করে তিনি বলেন, তার জোট এবং রক্ষণশীলদের ভোট সংসদের মাধ্যমে বিলটি পাসের জন্য যথেষ্ট ছিল।

তিনি বলেন, "আজকের সময়ে কঠোর ব্যবস্থা প্রয়োজনীয়।" তিনি আরও বলেন, "সেন্ট্রাল প্যারিসে যদি কেউ আপনার নাক চেপে ধরে, তবে আপনি দেশের বাকি অংশে বিরাজমান সমস্যার সমাধান করতে পারবেন না।"

এর আগে ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলি অধিবেশনে বিলটি নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের কোনোরকম ব্যবস্থা ছাড়াই আগের সংস্করণটি বাতিল করা হয়েছিল। আর সেটি ম্যাক্রোঁর জন্য ছিল একটি বড় ধাক্কা।

এদিকে পার্লামেন্টে বিলের খসড়া জমা দেয়ার পর দেখা গেছে, অভিবাসন নীতি সংশোধন করে বিভিন্ন সময় আরও কঠোর পদক্ষেপ নেয়ার পাশাপাশি জটিল করা হয়েছে অভিবাসনপ্রক্রিয়া। আর এ নিয়ে বামপন্থী রাজনীতিকদের অভিযোগ, সরকার এ বিষয়ে কট্টর ডানপন্থীদের কাছে নতি স্বীকার করেছে।

এর আগে পরিবর্তিত বিলটির প্রতি নিজের সমর্থনের কথা জানিয়েছেন মারি লো পেন। তবে প্রেসিডেন্ট মাখোঁর রেনেসাঁ পার্টি ও তাঁর রাজনৈতিক জোটভুক্ত বাম ঘরানার অনেকেই এ বিলটি সমর্থন  না করার ইঙ্গিত দিয়েছেন। এমনকি সরকারের কয়েকজন মন্ত্রীও এ প্রসঙ্গে পদত্যাগের হুমকি দিয়েছেন।

ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট পদে তিন দফা নির্বাচনে লড়েছেন মারি লো পেন। পার্লামেন্টে তিনি আরএন দলের নেতা। এদিকে ২০২৭ সালের নির্বাচনেও তিনি প্রেসিডেন্ট পদে লড়তে পারেন বলে জানান গেছে। 

অভিবাসন বিল পাসের ইস্যুতে মারি লো পেন বলেন, এটা আরএনের জন্য একটি আদর্শগত বিজয়। কেননা, এটা এখন জাতীয় অগ্রাধিকার হিসেবে আইনে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।

এর আগে অবশ্য আরএন জানিয়েছিল দলটির আইনপ্রণেতারা পার্লামেন্টে অভিবাসন বিলের বিরুদ্ধে তাদের ভোট দেয়া কিংবা ভোটদানে বিরত থাকবেন। 

এদিকে বিলের ওপর আনা সংশোধনীগুলোর আওতায় অভিবাসন কোটা প্রবর্তনের ফলে অভিবাসীদের সন্তানদের ফরাসি নাগরিক হিসেবে নাগিরকত্ব লাভ বেশ কঠিন হয়ে পড়ল। বিলটিতে দেশটির পুলিশের বিরুদ্ধে করা গুরুতর কোনো অপরাধ প্রমাণিত হলে দণ্ডিত কোনো দ্বৈত নাগরিকদের তাদের ফরাসি নাগরিকত্ব থেকে বঞ্চিত করার বিধানও রাখা হয়েছে। 

লে পেন বলেন, আরএন সংশোধিত আইনটিকে অনুমোদন করবে- যেটি ম্যাক্রোঁর দলের বামপন্থী সদস্যদের মধ্যে বিব্রতকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে পারে যা ডানপন্থীদের সাথে ঐক্যবদ্ধভাবে ভোট দেওয়াকে অপ্রীতিকর বলে মনে করেছেন।

রেনেসাঁ পার্টির বাম ঘরানার সংসদ সদস্য সাচা হউলি জানান, আমি বিলের বিপক্ষে ভোট দিব। আমার বিশ্বাস দলের আরও ৩০ জন ম্যাক্রোঁপন্থী  সংসদ সদস্যও এমনটা করবেন। পরিস্থিতির গুরুত্ব অনুধাবন করে ম্যাক্রোঁর পার্লামেন্টের ভোটাভুটির আগে এলিসি প্রাসাদে ক্ষমতাসীন দলের জরুরি বৈঠক ডাকেন।

পরে রেনেসাঁর ২০ জন সদস্য বিলটির বিপক্ষে ভোট দেন। এসময় ১৩১ জন পক্ষে এবং ১৭ জন ভোটদানে বিরত থাকেন। 

এর আগে দীর্ঘদিন যাবত ফ্রান্সে বিদেশী বাসিন্দাদের জন্য অর্থ প্রদান করে, তাদের ভাড়া দিতে বা তাদের সন্তানদের যত্ন নিতে সাহায্য করার জন্য কয়েকশ ইউরো পর্যন্ত মাসিক অবদানের মাধ্যমে অনুমোদিত হ্যে আসছিল। যা বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে উদার কল্যাণ ব্যবস্থার একটি নজির হিসাবে সবার কাছে প্রশংসনীয় ছিল। 

এবারে অতিমাত্রার ডানপন্থী এবং রক্ষণশীলদের যুক্তি এসব সুবিধা শুধুমাত্র ফরাসিদের জন্যই সংরক্ষিত থাকা উচিত।

ইতোমধ্যে বিল ইস্যুতে বিতর্কের জেরে সরকারের স্বাস্থ্যমন্ত্রী, উচ্চশিক্ষামন্ত্রী ও আবাসনমন্ত্রী ফরাসি প্রধানমন্ত্রী এলিজাবেথ বর্নির সঙ্গে দেখা করে পদত্যাগের হুমকি দিয়েছে। 

অন্যদিকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জেরাল্ড ডারমানিন গত রোববার সতর্ক করে বলেন, পার্লামেন্টে অভিবাসন বিল পাস না হলে ২০২৭ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে মেরি লো পেনের জয়ী হওয়ার ঝুঁকির মুখোমুখি হতে হবে।

তবে এখন বিলটি পাস হয়ে যাওয়ায় সরকারের প্রভাবশালী মন্ত্রীরা আদৌ পদত্যাগ করবেন কি না, সে বিষয়টি অবশ্য নিশ্চিত নয়। এদিকে সামগ্রিক পরিস্থিতি নিয়ে আজ বুধবার টেলিভিশনে জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিতে পারেন প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁ।

বলা হচ্ছে, ম্যাক্রোঁ মাইগ্রেশন বিলটিকে তার দ্বিতীয় ম্যান্ডেটের একটি মূল তক্তা বানিয়েছিলেন এবং আপস ছাড়াই এটিকে স্থগিত রাখতে হয়েছিল। ভোটের আগে কয়েক ডজন এনজিও এই আইনের বিরোধিতা করেছে।

এদিকে ফ্রেঞ্চ হিউম্যান রাইটস লিগসহ প্রায় ৫০টি গ্রুপ এক যৌথ বিবৃতিতে বলেছে, "এটি বিদেশিদের অধিকার ও জীবনযাত্রার অবস্থার জন্য গত ৪০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে পশ্চাদপসরণমূলক বিল।"

অন্যদিকে ফরাসী কমিউনিস্ট পার্টির নেতা ফ্যাবিয়েন রাসেল বলেছেন, অভিবাসনের বিরুদ্ধে আরএন প্রচারিত বিলের বিপক্ষে তাদের ছাপানো লিফলেটের মাধ্যমে আমরা প্রজাতন্ত্রের ইতিহাস এবং এর মৌলিক মূল্যবোধের পরিবর্তনের বিষয়ে জানতে পেরেছি। 

সূত্র: আল জাজিরা 

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //